বহুযুগ আগের কথা। সারা ভারতের অধিকাংশ জায়গাতেই তখন দাপিয়ে বেরাচ্ছে পালকি। তবে শুধু অভিজাতদের জন্যই ছিল এই পালকি। খরচ অপেক্ষাকৃত কম বলে মধ্যবিত্তদের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পালকি বা ডুলি। অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে আমাদের কলকাতাতেও যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে এই পালকি-ডুলি। বিয়ের সময়ওবর-কনে এই পালকি ব্যবহার করত। ‘পালকি’ শব্দটি মূলত সংস্কৃত ‘পল্যঙ্ক’ বা ‘পর্যঙ্ক’ থেকে উদ্ভূত। পালি ভাষায় এর নাম ‘পালাঙ্কো’। বড় পালকিগুলি বহন করত চার থেকে আট জন। আবার ডুলি বহন করতে লাগত মাত্র দু’জন। মূলত, দুলে-হাড়ি-বাগদিদের মতো নিম্নবর্গের মানুষরাই এই বহনের কাজ করত। তবে পরে বাঙালি বাহকদের জায়গায় জাঁকিয়ে বসে ওড়িশা ও বিহারের পালকি বাহকরা।
মূলত, এদেশীয় লোকেরা পালকি চাপলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাবুরাও মাইনে দিয়ে বেহারা রাখত। যেহেতু এই পালকির সঙ্গে সম্মান ও পদমর্যাদার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে, তাই কোম্পানির ছোটকর্তাদের পালকি-বেহারা রাখতে নিষেধ করা হতো। ইতিহাস বলছে, এই সময় থেকে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার শুরু হলেও পালকির চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে। পুজোর দিনে বাঙালি সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে-বউরা পালকি চেপে গঙ্গাস্নানে যেত। এরপর তাদের লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে পালকিসুদ্ধ জলে চোবানো হতো। জানা যায়, ১৮৫০ সালে একজন উড়িয়া পালকি বাহকের মাইনে ছিল মাসে ৪ টাকা। বিহারি পালকি বাহকের মাইনে ছিল মাসে ৫ টাকা। এই সময় পালকি ভাড়ায় নিলে খরচ হতো ১ টাকা ৪ আনা। সেসময় বেহারাদের মাইনে ছিল মাসে ২৫ টাকা। এক মাসের জন্য পালকি ভাড়া নিলে খরচ পড়ত ৩৭ টাকা।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
১৮৭০ সালের ১৫ ডিসেম্বরের ঘটনা। বঙ্কিমচন্দ্র পালকি করে বহরমপুর স্কোয়ার ফিল্ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই মাঠে তখন ক্রিকেট খেলছিলেন ব্রিটিশরা। বঙ্কিমের পালকি আটকালেন কর্নেল ডাফিন নামের এক ইংরেজ। তিনি পালকির দরজায় করাঘাত করতে বঙ্কিম পালকি থেকে নেমে বলেন, “Who the Devil you are?” ডাফিন কোনো উত্তর দিলেন না, বঙ্কিমকে হাত ধরে সরিয়ে দিলেন। এতে চূড়ান্ত অপমানিত হলেন বঙ্কিমচন্দ্র। তাঁকে প্রহার করেছিলেন ডাফিন, এমন মতও পাওয়া যায়। মাঠের অন্যান্য গোরা সাহেবরা কেউ বঙ্কিমচন্দ্রকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
তেজস্বী বঙ্কিম অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। পরের দিনই ডাফিনের বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা করে বসলেন। বহরমপুরে তাঁর বিপুল প্রভাব তখন। দেড়শো জন আইনজীবী তাঁর পক্ষে ওকালতনামায় সই করেছিলেন। অন্যদিকে কর্নেল সাহেব একজন উকিলও জোগাড় করতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত জেলা জজ বেনব্রিজের দ্বারস্থ হলেন। এই ব্রেনব্রিজও আগের দিন ছিলেন মাঠে, কিন্তু বঙ্কিমের পাশে দাঁড়াননি। যদিও দু’জনের আলাপ ছিল আগে থেকেই।
যাই হোক, মামলায় বেনব্রিজ মধ্যস্থতা করতে রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত একটাই, কর্নেল ডাফিনকে ক্ষমা চাইতে হবে বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে। ডাফিনের আর কোনো উপায়ও ছিল না। আদালত চত্বর তখন লোকে লোকারণ্য। সবার সামনেই বঙ্কিমের হাত ধরে ক্ষমা চাইলেন কর্নেল ডাফিন। বঙ্কিম তখন এই মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা...’। জীবনানন্দ দাশ এবং বনলতা সেন যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছেন বাংলার আপামর পাঠকের কাছে। আর এই বনলতা সেনের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছেন বিখ্যাত আলোকচিত্রী শম্ভু সাহা। পাঠককূলের সিংহভাগ সত্যজিৎ রায়ের তৈরি প্রচ্ছদের সঙ্গে পরিচিত থাকলেও শম্ভু সাহার নাম জানেন এমন মানুষ মেলা ভার। জানলে হয়তো অবাক হবেন, বইটির প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ তৈরি করেছিলেন তিনি। আপাতবিস্মৃত এই মানুষটি একসময় শান্তিনিকেতন এবং রবি ঠাকুরের ছবি তুলে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর সম্পাদিত Faces and Places of Visva Bharati বইটিতে এরকম বহু আলোকচিত্রের হদিশ মেলে।
এবার শম্ভু সাহার রূপ দেওয়া বনলতা সেনের প্রথম প্রচ্ছদের কথায় আসা যাক। ১৯৪২ সালে প্রকাশ পায় ‘বনলতা সেন’-এর প্রথম সংস্করণ। বইটির ব্রাউন কভারের প্রচ্ছদে লাল রঙে আঁকা এক মহিলার ছবি। সামান্য ক’টি আঁচড়ে ফুটে উঠেছে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার অবয়ব। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তাঁর ওই প্রচ্ছদ নিয়ে কোথাও কোনও চর্চা হয়নি। এমনকী জীবনানন্দকেও কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। অন্যদিকে, সিগনেট থেকে প্রকাশিত বনলতা সেনের দ্বিতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদের সঙ্গেই আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। সেই প্রচ্ছদ তৈরির ভার পড়েছিল বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের উপর। কিন্তু দক্ষ প্রচ্ছদশিল্পী সত্যজিতের সেই প্রচ্ছদ পছন্দ হয়নি স্বয়ং কবির। সুরজিৎ দাশগুপ্ত এবং বোন সুচরিতা দাশকে লেখা চিঠিতে কবির ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। জীবনানন্দ-গবেষক গৌতম মিত্রের লেখা থেকে জীবনানন্দের সেই ক্ষোভের কথা জানা যায়। ১৯৫২ সালে বই প্রকাশের তিনমাসের মধ্যেই তিনি সুরজিৎ দাশগুপ্তকে লেখেন, ‘বনলতা সেনের প্রচ্ছদ দেখে আমি অত্যন্ত হতাশ। এত খারাপ প্রচ্ছদপট আমি জীবনে দেখিনি।’ বোন সুচরিতাকে লিখেছিলেন, ‘কাগজ-ছাপা-বাঁধাই সব ভালো; কিন্তু ছবিটা আমার আদৌ পছন্দ হয়নি।’
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের ধাক্কা সামলাতে পারেনি ব্রিটিশ রাজ। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পর আরও একটি পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা। ১৯১১ সালে দেশের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে রাজধানীর মর্যাদা পরোক্ষভাবে আরও দু’দশক বহন করে চলেছিল তিলোত্তমা। কারণ, ১৯৩১ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের রাজধানী হয় নয়াদিল্লি। ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জের দিল্লি দরবারে ১৯১১ সালেই অবশ্য এব্যাপারে সিলমোহর পড়েছিল। যুক্তি হিসেবে ভৌগোলিক কারণ, প্রশাসনিক জটিলতা সহ একগুচ্ছ তত্ত্ব হাজির করে ব্রিটিশ সরকার। যদিও সেগুলির বাস্তব ভিত্তি নিয়ে বারংবার প্রশ্ন উঠেছে। আসলে পিঠ বাঁচাতে এসব কারণগুলি দেখিয়েছিল তারা। আদপে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়ে ব্রিটিশরাজ। তার উপর মাথাচাড়া দিচ্ছিল চরমপন্থী আন্দোলনও। সব মিলিয়ে রাতের ঘুম উড়ে যায় ‘শাসকদের’। তাই রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করতে চিঠি যায় তত্কালীন সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়ার কাছে। তাতে নানা অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছিলেন তত্কালীন ভাইসরয়। যদিও প্রকৃত কারণ বুঝতে অসুবিধা হয়নি বড়কর্তাদের। কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি মান্যতা পায়। পঞ্চম জর্জের হাত ধরে শুরু হয় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া। দিল্লিকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে (বলা ভালো, সাজিয়ে তুলতে) চার বছর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়। যুদ্ধে বিপুল খরচ সামলে রাজধানীতে প্রশাসনিক দপ্তর সহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক অফিস তৈরির কাজ ধাক্কা খায়। এর মধ্যে ধাপে ধাপে সিভিল লাইনসে তৈরি হয় সরকারের অস্থায়ী অফিস। আধিকারিকদের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও। প্রাথমিকভাবে চার বছরের সময়সীমা ধার্য হলেও দিল্লিকে সাজিয়ে তুলতে ২০ বছর লেগে যায়। ১৯৩১ সালে তত্কালীন ভাইসরয় লর্ড আরউইনের হাত ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের রাজধানী হিসেবে যাত্রা শুরু করে দিল্লি।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
বাগবাজারের অখ্যাত এক মিষ্টির দোকান। তার সামনে এসে দাঁড়াল ঘোড়ায় টানা গাড়ি। গাড়িতে ছিল ধনী মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী ভগবান দাস বাগলার পরিবার। তাঁর ছোট ছেলের তখন গলা ফাটছে পিপাসায়। দোকান দেখে তাই দাঁড়িয়েছে গাড়ি। বাবার হাত ধরে নেমে এসেছে নাবালক। শুধু জল দেওয়া রীতি নয়, তাই জলের পাত্র তুলে দেওয়ার আগে সেই ছেলের হাতে গোলাকার মিষ্টি তুলে দিয়েছিলেন ময়রা। পিপাসা মেটার সঙ্গে অদ্ভুত স্বাদ অভিভূত করেছিল খুদেকে। এমন মিষ্টি সে আগে খায়নি। বাবাকে বলেছিল সে কথা। তা শুনে এক হাঁড়ি মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ভগবান দাস। পরিবারের সকলেই এমন সুস্বাদু গোল্লার প্রেমে মাতোয়ারা। এ যেন ম্যাজিক! অভিনব সেই মিষ্টির কথা ব্যবসায়ী পরিবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল গোটা কলকাতায়। এভাবেই খ্যাতির প্যারাসুটে সওয়ার হয়েছিল রসগোল্লা। নবীনচন্দ্রের সৃষ্টিকে তিলোত্তমায় ছড়িয়ে দিতে বড় ভূমিকা ছিল ওই মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীর। গবেষকদের মতে, ১৮৬৮ সালে কলকাতায় বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাসের হাতে সৃষ্টি হয় রসগোল্লা। তাঁর নামে জুড়েছে ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ শিরোপা। ১৮৬৪ সালে জোড়াসাঁকোয় একটি মিষ্টির দোকান খোলেন কলকাতার চিনি ব্যবসায়ী নবীনচন্দ্র দাস। দোকানটি বেশি দিন চলেনি। ফের ১৮৬৬ সালে বাগবাজারে আরও একটি মিষ্টির দোকান খোলেন তিনি। দোকানটির প্রধান মিষ্টি ছিল সন্দেশ। শহরের খানদানি বণিকদের আশ মিটছিল না সন্দেশে। নতুন কিছু তৈরির কথা ভাবছিলেন নবীন। দু’বছরের মধ্যে তিনি তৈরি করেন রসগোল্লা। সেই রসগোল্লার মালিকানা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর রসগোল্লার জিআই ট্যাগ লাভ করে পশ্চিমবঙ্গ। যা বাংলার পাশাপাশি নবীনেরও জয়।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
গানগুলো ভালোই হয়েছে। তবে এগুলো ‘কোরাস’ গাওয়ার পক্ষে উপযুক্ত। আপনি অন্য গান তৈরি করলে ফের নিয়ে আসবেন। আমি শুনব। ভালো লাগলে নিশ্চয়ই গাইব। লম্বা, ফরসা, সুদর্শন, গায়ক ভদ্রলোকের কথা শুনে নিরাশ হলেন সলিল। ভাঙা মন নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে এক পা, এক পা করে নামতে থাকলেন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী সলিল চৌধুরী। গড়িয়াহাটের যশোদা ভবনের গুপ্ত ডেরা থেকে ভবানীপুরের ইন্দ্র রায় রোডে ছুটে আসা তবে বিফলই হল! ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের ছাত্র তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনেই এখানে আসা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে।
দু’-তিন ধাপ নেমে হঠাৎ কী মনে হল, ঘুরে তাকালেন সলিল। দরজায় তখনও দীর্ঘকায় মানুষটি দাঁড়িয়ে। সলিল ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, আর একটা গান আছে আমার কাছে, যদিও পুরোটা হয়নি...। হেমন্ত বললেন, বেশ তো শোনান না। আবার উঠে গেলেন সদ্য তরুণ সুরকার। খাতা বের করে শোনাতে শুরু করলেন।
বাঃ এই গানটা তো ভালো হয়েছে। এটা আমি গাইতে পারি। আপনি শেষ করুন গানটা। খুশি মনে ফিরে এলেন সলিল। গান শেষ করে দিয়েও এলেন। সেটা ১৯৪৯ সাল। হঠাৎ করেই নিষিদ্ধ হল কমিউনিস্ট পার্টি। সলিল গা ঢাকা দিলেন সন্দেশখালিতে। সেখানে বসেই শুনতে পেলেন তাঁর সেই গান ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রেকর্ড হয়ে বেরিয়েছে। হেমন্ত নিজেই মিউজিক অ্যারেঞ্জ করেছেন। হইচই পড়ে গিয়েছে বাংলাজুড়ে। গানটি যাকে বলে ‘স্ম্যাশ হিট’ তাই হয়েছে। তবে সেই রেকর্ড এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য। গানটি ফের নতুন ভাবে মিউজিক অ্যারেঞ্জ করে রেকর্ড করা হয়। বর্তমানে আমরা যে গানটি শুনি সেটি সেই দ্বিতীয় বারে রেকর্ড করা। সে আর এক গল্প।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
নন্দননগর অঞ্চল ছিল বড় বড় ঝিল আর জঙ্গলে ঘেরা। দেশভাগের পর হল বন কেটে বসত। ঝিলের ধারে ইতিউতি কাঁচা বাড়ি মাথা তুলল। পূর্ব বাংলা থেকে আগত উদ্বাস্তু মানুষজন বসবাস করতে লাগল। তখন থেকেই এখানে শ্রীশ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারীর পূজার্চনা হতো। ভক্তরা বাবা লোকনাথের ছবি নিয়ে পথেঘাটে নামগান করতেন। বিশেষ বিশেষ তিথিতে কোনও ভক্তের বাড়িতে বা স্থানীয় কোনও ক্লাবে সমবেত হয়ে পালন করতেন উৎসব।
আটের দশকের শেষদিকে ভক্তমণ্ডলীর উৎসাহে একটি ছোট্ট লোকনাথ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই মন্দিরই আজ মহীরুহের রূপ নিয়েছে। মন্দিরের মধ্যভাগে বাবা লোকনাথের শ্বেতশুভ্র বিগ্রহ বিরাজমান। একদিকে রয়েছেন দেবাদিদেব মহেশ্বর, অন্যদিকে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি। নাটমন্দির, ভোগ রান্নার ঘরও রয়েছে এখানে। প্রতি বছর ২৮ আষাঢ় মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবসে বিশ্বশান্তি মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, দোলযাত্রা, বাবার তিরোধান দিবসে ভক্তের ঢল নামে মন্দিরে। লোকনাথ ব্রহ্মচারী মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণময় কর্মে সর্বদা নিয়োজিত থাকতে তাঁর ভক্তদের উপদেশ দিয়ে গেছেন। তাই পূজাপাঠ ছাড়াও চলে সামাজিক কর্মসূচি। প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদান, দরিদ্র নারায়ণ সেবা, বস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, চারাগাছ প্রদান এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয় বছরভর। উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা, ভক্তদের জন্য অতিথি নিবাস নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাই এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে জানালেন বেলঘরিয়া নন্দননগর লোকনাথ সেবা নিকেতনের সম্পাদক রঞ্জিত দাস।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জলসাঘর’ গল্পটা পড়ে তাঁর মনে হয়েছিল, এটা নিয়ে একটা মিউজিক্যাল ফিল্ম বানালে কেমন হয়! ব্যস, মনে হওয়া মাত্র তারাশঙ্করের কাছে গিয়ে কিনে ফেললেন গল্পটির স্বত্ব। তখনও সত্যজিৎ রায় এটি নিয়ে ছবি করার কথা ভাবেননি। কিন্তু সেই ছবি আর করা হয়নি। না, তিনি কোনও চিত্র পরিচালক নন, তিনি বাংলা স্বর্ণযুগের এক বিখ্যাত গায়ক। নাম মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিটা গানেই যেন ছড়িয়ে পড়ে এক মুগ্ধ সুর মূর্চ্ছনা। আধুনিক গানের মধ্য দিয়ে যাঁরা বাংলার ধ্রুপদী সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করেছেন, মানবেন্দ্র ছিলেন তাঁদেরই একজন। ‘ওই মৌসুমি মন শুধু রং বদলায়’, ‘আমি এত যে তোমায় ভালোবেসেছি’, ‘কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী’ সহ অসংখ্য গানের ভিতর দিয়ে আজও বেঁচে আছে তাঁর সম্মোহনী গায়কী। তাঁকে গান শিখিয়েছিলেন স্বয়ং কাজি নজরুল ইসলাম।
তখন ‘চাঁপাডাঙার বউ’ সিনেমা তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন পরিচালক নির্মল দে। তিনি মানবেন্দ্রকে দায়িত্ব দিলেন সঙ্গীত পরিচালনার। সেকথা শুনে তারাশঙ্কর বললেন, ‘আমার ছবিতে কে সুর দিচ্ছে, তাকে আগে একটু দেখতে চাই। তার গানের একটু পরীক্ষা নিই, তবে রাজি হব।’
তারাশঙ্করের টালার বাড়িতে পরিচালক নিয়ে গেলেন মানবেন্দ্রকে। তাঁকে দেখে ভরসা পেলেন না তারাশঙ্কর। তিনি পরিচালককে বললেন, ‘না, মনে হচ্ছে একে দিয়ে হবে না। তুমি একটা পাকা সঙ্গীত পরিচালকের খোঁজ কর।’ অবশ্য একটু পরে কী মনে হল, একটা গানের দু’টো লাইন লিখে দিয়ে মানবেন্দ্রকে বললেন, ‘একটু সুর করে দেখাও তো। এটা গাজনে শিবের নৃত্য। ছবিতে উত্তমকুমার গাইবেন।’ একটু ভেবে মনে মনে সুর করে মানবেন্দ্র গেয়ে উঠলেন। ঢাকের তালে তাল মেলানো সেই সুর একেবারে গাজনের ছন্দের সঙ্গে মিলে যায়। গান শুনে খুশি হলেন তারাশঙ্কর। বললেন, ‘না হে নির্মল। একে দিয়েই হবে।’
ছিলেন খাঁটি ইস্ট বেঙ্গল সমর্থক। লাল-হলুদ জিতলেই বড় একটা ইলিশ কিনে বাড়ি ঢুকতেন। দিলখোলা সেই মানুষটি চিরবিদায় নিলেন ১৯৯৮ সালের ১৯ জানুয়ারি।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
দাসানি স্টুডিওতে শ্যুটিং চলছিল একটি মেগার। কম্পোজিট শট। গীতা দের সঙ্গে অভিনয় করছেন এক তরুণী। তরুণীর একটি লম্বা ডায়লগ ছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে গীতা দের এক্সপ্রেশন ধরা হচ্ছিল ক্যামেরায়। কিন্তু তরুণী অভিনেত্রীর সংলাপ বলার ধরন কিছুতেই মনঃপুত হচ্ছিল না পরিচালকের। বারবার শট এনজি হচ্ছে। অন্তত সাত থেকে আটবার শট নেওয়ার পর ওকে করলেন পরিচালক। অতক্ষণ ধরে গীতা দের অভিব্যক্তির এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। গীতা দে বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন বলেই অতক্ষণ অভিব্যক্তি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। অভিনয় শিখেছিলেন শিশির ভাদুড়ির কাছে। তখন তিনি নিতান্তই বালিকা। ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে তিনি যখন সুপ্রিয়া দেবীর মায়ের চরিত্র করছেন তখন তাঁর বয়স ২৮। একটি দৃশ্যে সংলাপ ঠিকঠাক বলতে পারছিলেন না বলে ঋত্বিকের হাতে চড়ও খেয়েছেন। তাতে যে তাঁর অভিনয়ের উন্নতি হয়েছে, পরে সে কথা গর্ব করে বলতেন। মাত্র ছ’বছর বয়সে প্রথম অভিনয় করেছিলেন সিনেমায়। খুব অল্প বয়সে তাঁকে কীর্তনশিল্পী রাধারাণী দেবীর কাছে নাচ, গান ও অভিনয় শেখার জন্য ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু তার পরেই গীতা দে’র ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসতে থাকে একের পর এক দুর্যোগ। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি মৃত্যু পর্যন্ত দুর্যোগ তাঁর পিছু ছাড়েনি। শেষ বয়স পর্যন্ত অর্থের জন্য অভিনয় করতে হয়েছে তাঁকে। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই তাঁকে ডাকতেন ‘গীতা মা’ বলে। সুচিত্রা সেন থেকে সন্ধ্যা রায়, রত্না ঘোষাল, মহুয়া রায়চৌধুরী সবাই ‘গীতা মা’ বলতে অজ্ঞান ছিলেন। মহুয়া রায়চৌধুরী তখন হাসপাতালে। প্রত্যেক দিন তিনি প্রসাদী ফুল নিয়ে রেখে আসতেন মহুয়ার শয্যার ধারে। বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্ত পর্যন্ত সেই অপত্য স্নেহের ভাগ পেয়েছেন। কলকাতায় তখন ‘পরিণীতা’ ছবির শ্যুটিং চলছে। সেই সময় প্রায় প্রতিদিনই গীতা দে ‘সঞ্জুবাবা’-র জন্য খাবার বানিয়ে নিয়ে যেতেন। দুঃখের বিষয়, শেষ জীবনে প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় মারা যান এমন বড় মনের মানুষটি।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
সে একটা দিন ছিল। যখন হাতিবাগানের থিয়েটার পাড়া গমগম করত। সেরকমই একটা সময়ে রঙ্গনায় চলছে সুপারহিট নাটক ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’। নির্দেশনা ও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি শো-ই হাউসফুল। লোক ভেঙে পড়ছে নাটকটি দেখতে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেনা-পরিচিত, বন্ধুবান্ধব, সহ-অভিনেতারাও আসছেন দেখতে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা অভ্যেস ছিল, পরিচিত কেউ নাটক দেখতে এসেছেন জানতে পারলে কায়দা করে তাঁর নামটা নাটকের কোনও একটা সংলাপে ঢুকিয়ে দিতেন। অন্য দর্শকরা বুঝতে না পারলেও যাঁর নাম নেওয়া হচ্ছে, তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পারতেন। ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত সহ অনেকেরই সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তা একদিন বাংলা ছবির আর এক দিকপাল অভিনেতা চিন্ময় রায় গিয়েছেন নাটকটা দেখতে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন সে কথা। নাটকে একটা জায়গায় বাড়িওয়ালার সঙ্গে ঝগড়ার দৃশ্যে ভানু হঠাৎ বলে বসলেন, ‘আমারে খেপাইয়েন না, বুঝছেন, আমারে খেপাইয়েন না। আমার হাতে চিনু গুন্ডা আছে। আমার লগে লাগলে চিনুরে আইন্যা এমন দিমু না...।’ বলাই বাহুল্য এই সংলাপ নাটকের স্ক্রিপ্টে ছিল না। চিন্ময় রায়কে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘চিনু’, ‘চিনুদা’ এভাবেই সম্বোধন করা হতো। তিনি দর্শকাসনে আছেন জেনেই তাঁর নামটা জুড়ে দিয়েছিলেন ভানু। অন্য যাঁদের ক্ষেত্রে এ জিনিস হয়েছে, তাঁরা সবাই বিষয়টা উপভোগ করেছেন আসনে বসে বসেই। কিন্তু চিন্ময় রায়ও তো ডাকসাইটে অভিনেতা। মঞ্চ থেকেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। এরকম ইম্প্রোভাইজেশন তিনি বহু দেখেছেন। এমন সুযোগ তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তিনি নন। ভানু ডায়লগ শেষ করা মাত্র চিন্ময় আসন ছেড়ে মঞ্চের সামনের সিঁড়িতে উঠে এসে বললেন, ‘কী হল গুরু কোনও ঝামেলা হয়েছে নাকি!’ এবার চিনুকে সামাল দিতে ভানু বলে উঠলেন, ‘এখনও হয় নাই, হলে তরে ডাকুম অনে, অহন তুই যা, তরে লাগব না।’ একেই বলে সেয়ানে সেয়ানে। এই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ওই শোয়ে দর্শকাসনে হাজির ছিলেন অভিনেতা মেঘনাদ ভট্টাচার্য। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় মারা গিয়েছিলেন ১৯৮৩ সালের ৪ মার্চ। ৬২ বছর বয়সে। আর চিন্ময় রায় মারা গিয়েছিলেন সেই মার্চ মাসেরই ১৭ তারিখ, ২০১৯ সালে, ৭৯ বছর বয়সে।
বাকি তথ্যের জন্য শুনতেই হবে এই পর্ব...
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
বাংলা বছরের শেষ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়ক পুজো। শিব আরাধনার এই পুজোয় এমন কিছু রীতি রয়েছে, যা মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত ছাইয়ের উপর হাঁটা, কাঁটাঝাঁপ, ছুরি বা ধারালো বঁটির উপর ঝাঁপ, অগ্নিনৃত্য ইত্যাদির মাধ্যমে এই পুজোয় দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করার প্রয়াস জারি থাকে।
শিব ধ্বংসের দেবতা। রুদ্রের আরাধনায় ভূতপ্রেত, পুনর্জন্মবাদ প্রভৃতি লোকবিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে চড়ক পুজোর সঙ্গে। মূলত সেই কারণেই নানা দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে মনে করে শিবভক্তের দল। চড়কগাছে লোহার হুড়কো দিয়ে বেঁধে দ্রুত গতিতে চাকার মতো ঘোরানো হয় কোনও কোনও ভক্তকে। পিঠ, হাত, পা, জিভ প্রভৃতি অঙ্গে লোহা গেঁথে দেওয়া হয়।
কিন্তু এইরকম ধর্মাচরণ ব্রিটিশের চোখে নৃশংস বলে পরিগণিত হয়। শ্বেতাঙ্গ সমাজ এই প্রথার বিরোধিতা করতে শুরু করে। আঠারোশো পঁয়ষট্টি খ্রিস্টাব্দে স্যর সিসিল বিডনের উদ্যোগে ব্রিটিশ সরকার আইন করে চড়ক উৎসবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে অবশ্য শিব অনুরাগীদের সম্পূর্ণ দমিয়ে রাখা গেল না। তাদের কাছে এ উৎসব আত্মত্যাগ ও সহিষ্ণুতার প্রতীক। প্রতিবাদে শামিল হল ব্রিটিশ বিরোধী তরুণ সমাজ।
বর্তমানে বাংলার অনেক স্থানেই চিরাচরিত প্রথায় চড়ক উৎসব পালন করা হয়। বিশেষ করে কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলিতে এই চড়ক উৎসবের প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায়। শহর কলকাতার কিছু এলাকাতেও চড়ক উৎসব হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাতুবাবুর বাজার অর্থাৎ বিডন স্ট্রিট সংলগ্ন ডাকঘরের পাশে বসা চড়ক মেলাটি। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস এই রাস্তাটি চড়ক বিরোধী স্যর সিসিল বিডনের নামাঙ্কিত।।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
হাওড়া-কালকা মেল তখন সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন। যদিও তার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ওঠে না। তদানীন্তন রেল বোর্ড তাই আরও উচ্চগতির ট্রেনের কথা ভাবছে। এমন এক ট্রেন, যার গতি ওঠানো যাবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। পরের পর বৈঠক হচ্ছে, চায়ের কাপে তুফান উঠছে। সিদ্ধান্ত হল, আরও উচ্চ গতিতে ট্রেন চালানোর ব্যাপারে একটি সমীক্ষা হবে। সেটা ১৯৬০ সাল। এরপর একের পর এক মত, বিরুদ্ধ মত। অবশেষে সেই সমীক্ষা রিপোর্ট জানাল, সম্ভব। সাত বছর পর, ১৯৬৭ সালে হাওড়া-নয়াদিল্লি রুটে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিমি গতিতে চলতে পারে, এমন ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু করল রেল বোর্ড।
আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানী এক্সপ্রেসের আত্মপ্রকাশ অবশ্য আরও দু’বছর পর। ১৯৬৯ সালের ১ মার্চ। ওইদিন নয়াদিল্লি থেকে হাওড়ার উদ্দেশে প্রথম রওনা দিয়ে ছিল রাজধানী এক্সপ্রেস। ৩ মার্চ ট্রেনটি হাওড়া থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয়। দেশের সবচেয়ে অভিজাত যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার পালক জুড়ল পূর্ব রেলের মুকুটে। সেসময় অবশ্য দ্বি-সাপ্তাহিক ছিল রাজধানী এক্সপ্রেস। তখন যদিও আইসিএফ কোচ। আধুনিক এলএইচবি নয়। শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি রুটে রাজধানী এক্সপ্রেসের জন্য আম বাঙালিকে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ৩১ বছর।
প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস চালুর ‘জন্মদিন’ গেল সদ্যই। এখন অবশ্য নরেন্দ্র মোদির সাধের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিমি গতিতে ছুটতে পারা এই ট্রেনকে দেশের প্রথম সেমি-হাইস্পিড ট্রেনের তকমাও দেওয়া হয়েছে। আমজনতা বন্দে ভারত নিয়ে মাতামাতিও করছে। কিন্তু রাজধানী এক্সপ্রেসের জনপ্রিয়তা কমেনি একফোঁটাও। অন্তত রেলের বিভিন্ন সময়ের ‘অকুপেন্সি রেট’ই তার প্রমাণ। বছর পঞ্চান্ন আগেই রাজধানী এক্সপ্রেস তার সর্বোচ্চ গতি তুলে ফেলেছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারে। ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল ১৭ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময়ে। নস্টালজিয়ায় মাখামাখি হয়েও রাজধানী এক্সপ্রেস তাই এখনও দূরের জার্নির অন্যতম ভরসার ট্রেন। বর্তমানে যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
যদি প্রশ্ন করা হয়,এভারেস্টে কোন পর্বতারোহী প্রথম পদার্পন করেছিলেন?তাহলে চট পট জবাব মিলবে এডমন হিলারি ও তেনজিং নোরগে। দিনটি ছিল ১৯৫৩ সালের ২৯মে। কিন্তু তার আগেই হয়তো এই দুঃসাহসিক অভিযানে কেউ সফল হয়ে ছিলেন। কিন্তু কে? কি নাম তাদের?
বাকি তথ্যের জন্য শুনতেই হবে এই পর্ব...
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
মাথার উপর দিয়ে ধোঁয়ার মতো উড়ে যাচ্ছে সাদা চিতাভস্ম। তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে লাল, সবুজ ও গোলাপি আবির। মুঠো মুঠো ছাই নিয়ে ওড়াচ্ছে সকলে। মাখছে মুখে-চোখে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে রয়েছেন সাধুরাও। চিতা থেকে ছাই তুলে মাথায় ছোঁয়াচ্ছে কেউ কেউ, সারা অঙ্গে মাখছে। সেই সঙ্গে একে অপরকে মাখিয়ে দিচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় প্রবল ভিড়। ওদিকে কিনারাম আশ্রম থেকে অঘোরী সাধুরা আসছেন। বিশাল শোভাযাত্রা রাস্তায়। সামনে বিশাল ষাঁড়ের ট্যাবলো। তার ওপরে বসে আছেন শিব-পার্বতী। গায়ে মাখা ছাইভস্ম। গলায় করোটির মালা। হাতে বিশাল ত্রিশূল। নানা ধরনের বাজনা বাজছে, চলছে নাচ, উড়ছে আবির।
আজ সব রাস্তার একটাই গন্তব্য, মণিকর্ণিকা ঘাট। ঘাটের একদিকে একটা চিতা জ্বলছে। অন্যদিকে সদ্য নিভে যাওয়া চিতার ছাই মুঠো মুঠো তুলে ওড়াচ্ছেন সাধুরা। তাঁদের ঘিরে ভক্তের দল।
ভিড়ের থেকে একটু আড়ালে সরে গিয়ে গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে প্রিয়ব্রত আর অনুরাধা। যেন এক অপার্থিব, অলৌকিক কোনও দৃশ্য তারা প্রত্যক্ষ করছে। প্রিয়ব্রত বলল, ‘অন্য সব দোলের থেকে বেনারসের দোলের একটা পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে। অন্য জায়গায় দোলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন রাধাকৃষ্ণ। আর বেনারসের দোল খেলা হয় মহাদেবকে ঘিরে।’
অনুরাধা অবাক হয়ে দেখে। এমন দোল খেলা সে কখনও দেখেনি। আসার আগে প্রিয়ব্রত যখন তাকে বলেছিল, ‘চলো, এবার দোলটা বেনারসে কাটিয়ে আসি।’ তখন অনুরাধা কিন্তু-কিন্তু করেছিল। সে বলেছিল, ‘শুধু তো দোল উৎসব নয়, এবার আমাদের বিয়ের রজতজয়ন্তী। অন্য কোথাও চলো। শান্তিনিকেতন কিংবা পুরুলিয়া।’
প্রিয়ব্রত বলেছিল, ‘চলো না এমন হোলিখেলা তোমাকে দেখাব, যা তুমি কোনওদিন দেখনি। ভাবতেও পারবে না।’ এখানে এসে তার মনটা একেবারে ভরে গেল। তবু মনটা একটু খারাপ। ছেলেটার পরীক্ষা বলে আসতে পারেনি। বেঙ্গালুরুতে পড়ে, লাস্ট সেমিস্টার চলছে।
আনমনা অনুরাধাকে ঠেলা দিয়ে প্রিয়ব্রত বলল, ‘বুঝলে তো শুধু লাল পলাশের উল্লাস আর শান্তিনিকেতনের আবহেই দোলের আনন্দ সীমাবদ্ধ থাকে না। ভারতের এক এক প্রদেশে দোলের বৈচিত্র্য এক একরকম। তবে আমাদের শুধুই দোল। অন্যদের হোলিখেলা।’
প্রিয়ব্রত দেখল, মানুষের আনন্দের বাঁধ যেন ভেঙে গিয়েছে। সমবেত উল্লাস। কেউ চিৎকার করে গান গাইছে, ‘আও খেলো মশান হোলি।’ কেউ গাঁজা টানছে, চলছে ভাং খাওয়া। উপস্থিত সাধুদের গলায় করোটির মালা। হাতে ত্রিশূল। বাজছে ডম্বরু, শিঙা, নাকাড়া। এর মধ্যে শিব আর পার্বতীর সাজেও আছেন কেউ কেউ। শ্মশানের মধ্যে দাঁড়িয়ে শিব ও পার্বতীর মালা বদল হচ্ছে।
অনুরাধা বলল, ‘কেন?’
প্রিয়ব্রত বলল, ‘কাশীতে মৃত্যু কোনও শোক নয়। তা এক আনন্দের অনুভূতি। মানুষের বিশ্বাস, কাশীতে মৃত্যু হলে স্বর্গবাস হয়। কবিগুরুও মৃত্যুকে অমৃতসমান মনে করেছিলেন।’
অনুরাধা বলল, ‘মরণ রে তুঁহু মম শ্যামসমান কিংবা মৃত্যু অমৃত কর দান।’
প্রিয়ব্রত বলল, ‘এখানকার মানুষ মনে করে মরণ রে তুঁহু মম শিবসমান। এই যে ছাই দিয়ে হোলিখেলা। ওরা মনে করে ওই ছাইয়ের স্পর্শের মধ্যেই যেন মিশে আছে অমৃতের গান। পুণ্যলোভাতুর মানুষ তাকেই স্পর্শ করে খোঁজে মুক্তির আনন্দ, জীবনের জয়োল্লাস কিংবা শেষ পারানির কড়ি। একদিন আমরা সবাই চলে যাব। এই রং একদিন শূন্যতায় মিশে যাবে। সেটাই ওই সাদা ছাইয়ের প্রতীকে প্রকাশ পায়।’
অনুরাধা বলল, ‘অমন করে বোলো না। তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা কোনওদিন ভাবতেই পারি না।’
অনুরাধার চোখে জল। তার মাথায় চুলের ওপর গুঁড়ো গুঁড়ো ছাই। চোখ মুছিয়ে দেয় প্রিয়ব্রত। বলে, ‘তোমার সঙ্গে এই যে পঁচিশটা বছর কাটিয়ে এলাম, তার সবটাই তো রঙের উৎসবের মতো।’
কথা বলতে বলতে প্রিয়ব্রত পাঞ্জাবির পকেট থেকে আবির বের করে অনুরাধার গালে, কপালে মাখিয়ে দেয়। অনুরাধাও মাখিয়ে দেয় প্রিয়ব্রতর মুখে।
অনুরাধা বলল, ‘ভাগ্যিস তোমার কথা শুনে এসেছিলাম, নাহলে এমন হোলিখেলা তো দেখা হতো না।’ হাত ধরে ওরা এগিয়ে যায় গঙ্গার দিকে। দু’হাতে আঁজলা ভরে জল নিয়ে মুখে ছিটিয়ে নিল, মাথায় দিল।
হাত ধরে দাঁড়াল দু’জনে। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল। অনুরাধা বলল, ‘তোমার সঙ্গে থাকতে চাই আরও অনেকদিন। বাবা বিশ্বনাথ যেন আমাকে সেই সুযোগ দেন।’
প্রিয়ব্রত হেসে বলল, ‘আমিও তাই চাই। চলো এবার হোটেলে ফিরে যাই। আজ রাতে হোটেলের বারান্দায় বসে গঙ্গার অনন্ত স্রোতের দিকে তাকিয়ে গান শুনব। অনেকদিন তোমার গান শুনিনি। তুমি গাইবে, আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে। সেটাই হবে আমাদের হোলিখেলা ও বিয়ের রজতজয়ন্তী পালন।’
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
[12:04 am, 22/3/2024] অর্ণব: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর বোলপুর। আম বাঙালির কাছে দু’টি নামই যেন সমার্থক। ছোটবেলায় বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরেই বীরভূমের এই অঞ্চলের সঙ্গে আলাপ বিশ্বকবির। পরবর্তীতে তাঁর বৃহৎ কর্মকাণ্ডের জেরে বিশ্বের ইতিহাসে স্থান করে নেয় বোলপুর। এক সময় অবশ্য এই জনপদের থেকেও বিখ্যাত ছিল পার্শ্ববর্তী সুপুর। সে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের কথা। আজকের বঙ্গদেশের রাঢ় অঞ্চলে সেই সময় নাকি রাজত্ব করতেন সুবাহু সিংহ। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন সুবাহুপুর নামে একটি নগর। শোনা যায়, লোকমুখে এই সুবাহুপুর হয়ে ওঠে সুপুর। অজয় নদীর তীরে অবস্থিত এই জনপদটিকে ঘিরে রয়েছে একাধিক লোককথা ও কিংবদন্তি। এসবের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বোলপুরের নামকরণের ইতিহাস।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে আমরা রাজা সুরথের হদিশ পাই। অনেকে বলে থাকেন, তিনি নাকি রাজা সুবাহু সিংহের বংশধর। সুপুরের রাজা ছিলেন সুরথ। জানা যায়, একবার তিনি নাকি কর্ণাট দেশ জয় করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। যদিও তা সফল হয়নি। পরে একসময় প্রজারাও তাঁকে ত্যাগ করে। রাজ্যহারা হয়ে শক্তিসাধনা শুরু করলেন রাজা। সুরথের সাধনায় তুষ্ট হলেন দেবী। ফিরিয়ে দিলেন হারানো রাজ্য। আবার অন্য এক লোককথা অনুযায়ী, রাজ্যহারা হয়ে সুরথ নাকি এই সুপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় এখানকার গ্ৰামদেবী ছিলেন ভগবতী শিবিক্ষা। দেবীকে তুষ্ট করতে লক্ষাধিক বলি দিয়েছিলেন রাজা সুরথ। এর জেরেই সুপুরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির নাম হয় বলিপুর। গবেষক ও সাংবাদিক প্রয়াত বিনয় ঘোষের লেখা থেকে জানা যায়, এই বলিপুরই নাকি আজকের বোলপুর। কিংবদন্তি ও লোককথা অনুযায়ী এভাবেই বোলপুরের জন্ম।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
বর্তমান সময়ে আপনি খুব ভোরে উঠতে চাইলে কী করবেন? হয়তো মোবাইলে কিংবা ঘড়িতে অ্যালার্ম সেট করে রাখবেন। আচ্ছা যখন অ্যালার্ম বা মোবাইল ফোন ছিল না, তখন মানুষ কীভাবে ঘুম থেকে উঠতেন? গ্রামের দিকে অনেকের ঘুম ভাঙত মোরগের ডাক শুনে। কিন্তু শহরাঞ্চলের মানুষের ঘরে তো আর মোরগ নেই। তাঁদের অ্যালার্ম দিত কে? উত্তরটা হল—মানুষই আগে অ্যালার্ম ঘড়ি ছিলেন। ‘নকার আপার্স’ নামে পরিচিত ছিলেন তাঁরা। ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের প্রথম দিকে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে তাঁদের দেখা মিলত। শিল্প বিপ্লবের পর কল কারখানা তৈরি হতে শুরু করল ইংল্যান্ড ও ইউরোপে। তার সঙ্গে সময়সূচি মেনে কাজের প্রচলনও শুরু হতে লাগল। সকাল সকাল কাজে যাওয়ার অভ্যাস প্রয়োজন পড়ল কর্মীদের। তাই সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে হতো তাঁদের। ইংল্যান্ডের ঠান্ডা আবহাওয়ায় সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর খুব ভোরে অনেকের ঘুম ভাঙত না। ফলে সময়মতো কাজে না গেলে মাইনে কাটা কিংবা চাকরিও চলে যেত। তখনই সমস্যা সমাধানে সৃষ্টি হল নকার আপার্স পেশার। প্রধানত বয়স্ক ও ভারী কাজের ক্ষমতা নেই, এমন ব্যক্তিরাই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হলেন। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মানুষদের ঘুম ভাঙাতে বেরিয়ে পড়তেন। হাতে থাকত লম্বা লাঠি বা বাঁশির মতো একটা পাইপ কিংবা হাতুড়ি। যেসব সাহেবরা দোতলায় বাস করতেন লম্বা লাঠি দিয়ে তাঁদের বেডরুমের জানলায় ঠক ঠক আওয়াজ করতেন। সাহেবের ঘুম ভেঙেছে নিশ্চিত হয়েই পরবর্তী বাড়ির দিকে এগতেন। নকার আপার্সরা রাতে ঘুমতেন না। ভোরে সুখনিদ্রায় যেতেন।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
আজ ৮ মার্চ। বিশ্ব নারী দিবস। আজকের দিনে যাঁদের কথা বললে বাঙালির মাথা নত হয়ে আসে, তাঁরা হলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ও চন্দ্রমুখী বসু। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রথম দুই ভারতীয় মহিলা স্নাতক। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় হলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ডাক্তার। উনিশ শতকের রক্ষণশীল বাংলায় যথার্থই বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৩ সালে বেথুন কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক হন কাদম্বিনী। এরপর ঠিক করেন ডাক্তারি পড়বেন। শুনে তো সবাই অবাক। সেই সমাজে মহিলাদের পরপুরুষের সামনে আসাকে পাপ বলে মনে করতেন অনেকে। সেখানে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়বেন সামান্য এক মেয়ে! মৃতদেহ নিয়ে কাটাছেঁড়া করবেন! কিন্তু মেয়ের এমন সাহসিকতা দেখে এগিয়ে এসেছিলেন বাবা ব্রজকিশোর বসু। ১৮৮৩ সালে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি হওয়ার পর কিছু শিক্ষক ও সহপাঠীও কাদম্বিনীর স্পর্ধায় হতবাক। তবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষক-চিকিৎসক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন কাদম্বিনী। শোনা যায়, স্নাতকস্তরের পরীক্ষায় নাকি মাত্র ১ নম্বর কম দিয়ে কাদম্বিনীকে ফেল করিয়েছিলেন এক বাঙালি অধ্যাপক। সেই সময় এগিয়ে আসেন ব্রিটিশ চিকিৎসক জে এম কোটস। তাঁর ঐকান্তিক উদ্যোগেই কাদম্বিনীকে ‘লাইসেন্সিয়েট ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ শংসাপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ঘটনার পর ফাইনাল পরীক্ষার সময় ফের ফেল করানো হয় তাঁকে। এরপর আবারও নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন ডাঃ কোটস। কাদম্বিনীকে ‘গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ’ ডিগ্রি দেন তিনি। এরপর পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কাদম্বিনী।
অপরদিকে চন্দ্রমুখী বসু হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ পাশ মহিলা। দেরাদুন নেটিভ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষার অনুমতি পান [7:50 pm, 08/03/2024] অর্ণব: ১৮৭৬ সালে। জুনিয়র পরীক্ষা বোর্ড তাঁকে প্রবেশিকা মানসম্পন্ন ধরলেও বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় স্বীকার করেনি। ১৮৮০ সালে ফ্রি চার্চ নর্মাল স্কুল থেকে চন্দ্রমুখী দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি প্রথম মহিলা হিসেবে ইংরেজিতে এমএ পাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে বেথুন কলেজের প্রিন্সিপাল হন চন্দ্রমুখী।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
স্কুলে কলেজে পড়ার সময়ে টেবিল, বেঞ্চ বাজিয়ে গান কে না গেয়েছে। কিন্তু সিনেমার গানের রেকর্ডিংয়ে এমন কাণ্ড ঘটেছে বললে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। তবে সত্যি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছিল। যিনি ঘটিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন, একমেবদ্বিতীয়ম রাহুলদেব বর্মন। যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে তাঁর মতো এত পরীক্ষা নিরীক্ষা খুব কম সঙ্গীত পরিচালকই করেছেন। কখনও কাচের গ্লাস বাজিয়ে, কখনও কোল্ড ড্রিঙ্কের ফাঁকা বোতলে ফুঁ দিয়ে, কখনও গায়িকার গলায় জল দিয়ে গার্গল করিয়ে সেই শব্দকেই যন্ত্রসঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেরকমই একবার পড়ার ডেস্ককে একটি গানের যন্ত্রানুসঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কীভাবে? গুলজারের ভাষ্যে বাকিটা পড়ুন।
আমি উত্তমকুমারকে নিয়ে একটা ছবি করেছিলাম। ছবিটার নাম ‘কিতাব’। আমার অন্যান্য ছবির মতো সেই ছবিতেও পঞ্চমই ছিল সঙ্গীত পরিচালক। কিতাবে একটা গানের সিকোয়েন্স ছিল যেখানে স্কুলের একটি ক্লাসে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টিচারের অনুপস্থিতিতে বেঞ্চ বাজিয়ে গান গাইছে, যেমন আমরা সবাই এক সময়ে করেছি। গানের কথাগুলি ছিল, ‘আ আ ই ই মাস্টারজি কি আ গয়ি চিঠঠি’। আমি গান লিখে দিয়ে এসেছি। পঞ্চম সুরও করে ফেলেছে। সে সুর আমাকে শুনিয়েছে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি আমার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছে। ফিল্ম সেন্টারে যেদিন গানের রেকর্ডিং সেদিন পৌঁছতেই দেখি একের পর এক স্কুলের ডেস্ক ঢুকছে রেকর্ডিং রুমে। আমি তো হাঁ! আজ তো গানের রেকর্ডিং, তাহলে এত ডেস্ক কী হবে? ভিতরে ঢুকে দেখি পঞ্চমও এসে গিয়েছে। শুরু হল রিহার্সাল। ওমা! দেখি গানের সঙ্গে মূল বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ডেস্ক বাজানো হচ্ছে। গানে অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহৃত হলেও, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডেস্ক বেজে গিয়েছে। এসব পঞ্চমের পক্ষেই সম্ভব। ইউ টিউবে গানটি আছে একবার শুনে দেখবেন।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
স্বামীর মঙ্গল কামনা। বিপদ থেকে তাঁকে রক্ষা করা। ভাদ্র মাসের প্রথম ১৫ দিন তাই স্বামীর মুখ দেখবেন না নববধূরা। যে কারণে তাঁরা বিয়ের পর প্রথম ভাদ্রমাস আসার আগেই শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি চলে যান। দুই বাংলার উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশের এই লোকাচার ‘ভাদর কাটানি’ নামে পরিচিত।
শ্রাবণের শেষ সপ্তাহে পায়েস, নানা স্বাদের পিঠে-পুলি, মিষ্টি ও ফলমূল নিয়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আনতে যান বাপের বাড়ির লোকজন। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন বউমার বাপের বাড়ির আত্মীয়দের সমাদর করার। আবার ভাদর কাটানি শেষ হলে বধূকে বাপের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনতে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সঙ্গে থাকে বিভিন্ন উপহার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভাদর কাটানির কোনও ব্যখ্যা না থাকলেও এ অঞ্চলের আদি প্রথা অনুযায়ী এই উৎসবটি যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গের দুই দিনাজপুর, মালদহ, জলপাইগুড়ির কোনও কোনও অংশে এই প্রথা আজও চালু রয়েছে। পাছে নববধূর মুখ দেখলে স্বামীর অমঙ্গল হয়! প্রচলিত ভাদর কাটানি প্রথাটি যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে চালু রয়েছে। ভাদর কাটানি এক সময় সম্ভ্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় ঘটা করে পালন করত। তাদের এই রেওয়াজ ক্রমেই ওই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকেও প্রভাবিত করে। পরে উৎসবটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়। নববধূরা লোকাচারকে কেন্দ্র করে বাপের বাড়িতে কিছুদিন থাকার সুযোগ পান। মেয়ে ঘরে ফেরার আনন্দই যে আলাদা!
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
[10:09 pm, 18/02/2024] অর্ণব: মমির প্রসঙ্গ উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিশরের ছবি। তাছাড়াও চিলি, কলম্বিয়া বা ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জেও মমির সন্ধান মিলেছে। সে-কথা অনেকেরই জানা। কিন্তু কেউ যদি মমি দেখার জন্য ইতালি ভ্রমণের প্রস্তাব দেয়? হ্যাঁ, ইতালিতে মমি! অবাক লাগছে নিশ্চয়ই? ইতালির ফ্রিউলি-ভেনিজিয়া গিউলিয়ার উডিন প্রদেশে গেলে বদলে যাবে এই ধারণা। চমকের এখানেই শেষ নয়। ইতালির এই মমিদের বিশেষত্ব হল, তারা বসবাস করে মানুষের সঙ্গেই। এমনকী মমিরা কখনও কখনও হয়ে ওঠে চা-পান কিংবা খেলার সঙ্গী। খুলেই বলা যাক ঘটনাটা। ইতালির ভেনজোনে শহর। ১৬৪৭ সাল। সেখানকার অন্যতম গির্জা সান মাইকেল চ্যাপেলের পুনর্নির্মাণ চলছে তখন। সেইসময়ই গির্জার বেসমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৪২টি মৃতদেহ। বলা ভালো ৪২টি মমি। অবশ্য মমি কথাটি তখনও ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়েনি। আর কাপড় নয়, বরং পাতলা শুকনো পার্চমেন্ট কাগজের আস্তরণে মোড়া ছিল ওই মৃতদেহ গুলি। স্বাভাবিকভাবেই মমির ধারণা না থাকায়, গির্জার সন্ত ও ভক্তদের বিশ্বাস ছিল, স্বয়ং ঈশ্বরই হয়তো তাঁদের পূর্বপুরুষদের এভাবে পাঠিয়েছেন তাঁদের কাছে। সেখান থেকেই শুরু হয় মমিদের সঙ্গে মানুষের বসবাস। একটা সময় গির্জার অভিভাবকও হয়ে উঠেছিল এই মমিরা। গ্রাম ছাড়ার আগে বহু মানুষ আশীর্বাদও নিয়ে যেতেন মমিদের থেকে। মমি-মানুষের এই অদ্ভুত সম্পর্ক স্থায়ী ছিল পাঁচের দশক পর্যন্ত। এই মমি সংস্কৃতি হয়ে উঠেছিল ভেনজোনের ঐতিহ্য।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304
ইতালির মমি রহস্য