
দাসানি স্টুডিওতে শ্যুটিং চলছিল একটি মেগার। কম্পোজিট শট। গীতা দের সঙ্গে অভিনয় করছেন এক তরুণী। তরুণীর একটি লম্বা ডায়লগ ছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে গীতা দের এক্সপ্রেশন ধরা হচ্ছিল ক্যামেরায়। কিন্তু তরুণী অভিনেত্রীর সংলাপ বলার ধরন কিছুতেই মনঃপুত হচ্ছিল না পরিচালকের। বারবার শট এনজি হচ্ছে। অন্তত সাত থেকে আটবার শট নেওয়ার পর ওকে করলেন পরিচালক। অতক্ষণ ধরে গীতা দের অভিব্যক্তির এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। গীতা দে বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন বলেই অতক্ষণ অভিব্যক্তি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। অভিনয় শিখেছিলেন শিশির ভাদুড়ির কাছে। তখন তিনি নিতান্তই বালিকা। ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে তিনি যখন সুপ্রিয়া দেবীর মায়ের চরিত্র করছেন তখন তাঁর বয়স ২৮। একটি দৃশ্যে সংলাপ ঠিকঠাক বলতে পারছিলেন না বলে ঋত্বিকের হাতে চড়ও খেয়েছেন। তাতে যে তাঁর অভিনয়ের উন্নতি হয়েছে, পরে সে কথা গর্ব করে বলতেন। মাত্র ছ’বছর বয়সে প্রথম অভিনয় করেছিলেন সিনেমায়। খুব অল্প বয়সে তাঁকে কীর্তনশিল্পী রাধারাণী দেবীর কাছে নাচ, গান ও অভিনয় শেখার জন্য ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু তার পরেই গীতা দে’র ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসতে থাকে একের পর এক দুর্যোগ। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি মৃত্যু পর্যন্ত দুর্যোগ তাঁর পিছু ছাড়েনি। শেষ বয়স পর্যন্ত অর্থের জন্য অভিনয় করতে হয়েছে তাঁকে। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই তাঁকে ডাকতেন ‘গীতা মা’ বলে। সুচিত্রা সেন থেকে সন্ধ্যা রায়, রত্না ঘোষাল, মহুয়া রায়চৌধুরী সবাই ‘গীতা মা’ বলতে অজ্ঞান ছিলেন। মহুয়া রায়চৌধুরী তখন হাসপাতালে। প্রত্যেক দিন তিনি প্রসাদী ফুল নিয়ে রেখে আসতেন মহুয়ার শয্যার ধারে। বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্ত পর্যন্ত সেই অপত্য স্নেহের ভাগ পেয়েছেন। কলকাতায় তখন ‘পরিণীতা’ ছবির শ্যুটিং চলছে। সেই সময় প্রায় প্রতিদিনই গীতা দে ‘সঞ্জুবাবা’-র জন্য খাবার বানিয়ে নিয়ে যেতেন। দুঃখের বিষয়, শেষ জীবনে প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় মারা যান এমন বড় মনের মানুষটি।
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304