
সে একটা দিন ছিল। যখন হাতিবাগানের থিয়েটার পাড়া গমগম করত। সেরকমই একটা সময়ে রঙ্গনায় চলছে সুপারহিট নাটক ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’। নির্দেশনা ও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি শো-ই হাউসফুল। লোক ভেঙে পড়ছে নাটকটি দেখতে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেনা-পরিচিত, বন্ধুবান্ধব, সহ-অভিনেতারাও আসছেন দেখতে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা অভ্যেস ছিল, পরিচিত কেউ নাটক দেখতে এসেছেন জানতে পারলে কায়দা করে তাঁর নামটা নাটকের কোনও একটা সংলাপে ঢুকিয়ে দিতেন। অন্য দর্শকরা বুঝতে না পারলেও যাঁর নাম নেওয়া হচ্ছে, তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পারতেন। ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত সহ অনেকেরই সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তা একদিন বাংলা ছবির আর এক দিকপাল অভিনেতা চিন্ময় রায় গিয়েছেন নাটকটা দেখতে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন সে কথা। নাটকে একটা জায়গায় বাড়িওয়ালার সঙ্গে ঝগড়ার দৃশ্যে ভানু হঠাৎ বলে বসলেন, ‘আমারে খেপাইয়েন না, বুঝছেন, আমারে খেপাইয়েন না। আমার হাতে চিনু গুন্ডা আছে। আমার লগে লাগলে চিনুরে আইন্যা এমন দিমু না...।’ বলাই বাহুল্য এই সংলাপ নাটকের স্ক্রিপ্টে ছিল না। চিন্ময় রায়কে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘চিনু’, ‘চিনুদা’ এভাবেই সম্বোধন করা হতো। তিনি দর্শকাসনে আছেন জেনেই তাঁর নামটা জুড়ে দিয়েছিলেন ভানু। অন্য যাঁদের ক্ষেত্রে এ জিনিস হয়েছে, তাঁরা সবাই বিষয়টা উপভোগ করেছেন আসনে বসে বসেই। কিন্তু চিন্ময় রায়ও তো ডাকসাইটে অভিনেতা। মঞ্চ থেকেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। এরকম ইম্প্রোভাইজেশন তিনি বহু দেখেছেন। এমন সুযোগ তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তিনি নন। ভানু ডায়লগ শেষ করা মাত্র চিন্ময় আসন ছেড়ে মঞ্চের সামনের সিঁড়িতে উঠে এসে বললেন, ‘কী হল গুরু কোনও ঝামেলা হয়েছে নাকি!’ এবার চিনুকে সামাল দিতে ভানু বলে উঠলেন, ‘এখনও হয় নাই, হলে তরে ডাকুম অনে, অহন তুই যা, তরে লাগব না।’ একেই বলে সেয়ানে সেয়ানে। এই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ওই শোয়ে দর্শকাসনে হাজির ছিলেন অভিনেতা মেঘনাদ ভট্টাচার্য। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় মারা গিয়েছিলেন ১৯৮৩ সালের ৪ মার্চ। ৬২ বছর বয়সে। আর চিন্ময় রায় মারা গিয়েছিলেন সেই মার্চ মাসেরই ১৭ তারিখ, ২০১৯ সালে, ৭৯ বছর বয়সে।
বাকি তথ্যের জন্য শুনতেই হবে এই পর্ব...
তথ্যসূত্র:বর্তমান পত্রিকা।
সূত্রধর: অর্ণব
Facebook:
https://facebook.com/EtiTomaderArnab
Insta:
https://instagram.com/eti_tomader_arnab
Youtube:
https://youtube.com/@etitomaderarnab8304